কথায় আছে ভারতবর্ষ গ্রামবাংলার দেশ। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যই হল দেশের সৌন্দর্য। সবুজে সবুজে ভরা মাঠ-ঘাট, দূর থেকে শুধু সবুজ-হলুদ পৃথিবী। এমনকী বাংলার অনেক কবিতায় গ্রাম বাংলার উল্লেখ রয়েছে। ইট কাঠ পাথরে ঘেরা শহুরে জীবন থেকে বাস্তব যেন পরিস্ফুটিত হয় গ্রামবাংলার জীবনের মাধ্যমেই। বর্তমানে সংবাদের বাইরেও শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভারতবর্ষের অনেক অজানা তথ্য প্রকাশ্যে আসছে। শুধু গ্রামবাংলা নয়, ভারতবর্ষ নদীমাতৃক দেশ। এখনও দেশের গ্রাম-গঞ্জে দেখতে কিছুদূর পর পরেই দেখা মেলে একেকটি পুকুর।
সুতরাং ভারতবর্ষে সবসময়ই নদীকে মায়ের রূপে পূজা করা হয়। দেশে গঙ্গা, যমুনা-সহ একাধিক নদীকে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয় এবং তাদের ঈশ্বরের রূপে পূজা করা হয়। কিন্তু জানেন কী, এদেশে যেমন নদীকে পূজা করা হয়, তেমনি এখানে এমন একটি নদী আছে যেটি থেকে মানুষ সবসময় দূরে থাকতে চায়। তবে কারণ কিন্তু গভীর জল বা বিপজ্জনক প্রাণীর বসবাস নয়, বরং নদীকে দেওয়া অভিশাপ। সেটি কী, নিম্নে আলোচিত বিস্তারিত জেনে নিন….
এই নদীর নাম কর্মনাসা। যেটি অবস্থিত উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে। এই নদীর নামেই লুকিয়ে রয়েছে ভয়াবহ অর্থ। কথিত আছে, এই নদী আপনার কর্মজীবনকে ধ্বংস করবে। ইউপির সোনভদ্র, চন্দৌলি, বারাণসী এবং গাজিপুরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এই নদীটি বক্সারের কাছে পৌঁছে গঙ্গায় মিলিত হয়েছে। কিন্তু দুই রাজ্যের মানুষই এই নদীর জল ব্যবহার করতে বা ছুঁতে ভয় পায়। বিশেষ করে কেউ যদি কোনো শুভ কাজ করতে যায়, তাঁরা এই নদীর ধারে-কাছেও আসেনা। তবে ঘটনা কী, কেন এই নদী অভিশপ্ত ছিল?
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা গিয়েছে যে, একবার রাজা হরিশচন্দ্রের পিতা সত্যব্রত তাঁর গুরু বশিষ্ঠের কাছে নিজের দেহ নিয়ে স্বর্গে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু গুরু তাঁর ইচ্ছাপূরণ করতে অস্বীকার করেছিলেন, এরপর রাজা সত্যব্রত গুরু বিশ্বামিত্রকে অনুরোধ করেন। কিন্তু গুরু বশিষ্ঠের সঙ্গে বিশ্বামিত্রের শত্রুতা থাকার কারণে তিনি সত্যব্রতকে তপস্যার জোরে শারীরিকভাবে স্বর্গে পাঠিয়েছিলেন। এই দেখে ইন্দ্রদেব রেগে গিয়ে রাজার মস্তক মাটিতে নামিয়ে দেয়। এর পর বিশ্বামিত্র তাঁর তপস্যায় রাজাকে স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে থামিয়ে দেবতাদের সঙ্গে যুদ্ধে নামেন। তখন রাজা সত্যব্রত আকাশে উল্টো করে ঝুলছিলেন, যার কারণে তাঁর মুখ থেকে লালা ঝরতে লাগে। এই লালাতেই তৈরি হয় নদীটি। তখন গুরু বশিষ্ঠ রাজা সত্যব্রতকে চন্ডাল হওয়ার অভিশাপ দেন। রাজার লালা নদীতে পরিণত হয়। এবং অভিশাপ পেয়ে এই নদীও অভিশপ্ত হয় বলে সেখানকার মানুষের বিশ্বাস।